মৃত্যুর পূর্বে ফিলিস্তিন নিয়ে যে বার্তা দিয়েছিলেন পোপ

মৃত্যুর আগের কয়েক মাসে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নিয়ে পোপ ফ্রান্সিসের অবস্থান উল্লেখযোগ্যভাবে কঠোর হতে শুরু করে। তার এই অবস্থান বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান নিয়ে একের পর এক সাহসী বক্তব্য দিয়ে পোপ যেন মানবাধিকার ও মানবতার পক্ষে একটি স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে পোপ একটি ব্যতিক্রমী ‘নাটিভিটি সিন’ উন্মোচন করেন। সেখানে শিশু যীশুকে দেখা যায় ফিলিস্তিনি কেফিয়েহ মোড়ানো অবস্থায়। এই শিল্পকর্মটির শিরোনাম ছিল ‘নাটিভিটি অব বেথলেহেম ২০২৪’, যা তৈরি করেন বেথলেহেমের দুই খ্রিস্টান শিল্পী—জনি আন্দোনিয়া ও ফাতেন নাসতাস মিতওয়াসি।

এই ব্যতিক্রমী শিল্পরূপ তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইসরায়েলপন্থী সংগঠন ‘প্রোক্লেইমিং জাস্টিস টু দ্য নেশনস’-এর সভাপতি লরি কারডোজা-মুর এই উদ্যোগের সমালোচনা করে বলেন, “এটি যীশু, বাইবেল এবং বেথলেহেম থেকে পালিয়ে যাওয়া ৮০% খ্রিস্টানের প্রতি অপমান। যীশু একজন ইহুদি ছিলেন, ফিলিস্তিনি নন।”

এর আগে, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসেও পোপ ফ্রান্সিস গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি এটিকে সম্ভাব্য ‘গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করার আহ্বান জানান।

এক সাক্ষাৎকারে পোপ বলেন, “আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজায় যা ঘটছে, তাতে গণহত্যার উপাদান রয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ‘গণহত্যা’র সংজ্ঞায় পড়ে কি না, তা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা উচিত।”

এই বক্তব্য এবং ভ্যাটিকানের শিল্প উপস্থাপনায় স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, পোপ ফ্রান্সিস ইসরায়েল-গাজা সংকট নিয়ে তার অবস্থান আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দৃঢ় করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি তার পোপশিপের সবচেয়ে স্পষ্ট ও সাহসী রাজনৈতিক বার্তাগুলোর একটি, যা সরাসরি মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে।

বিশ্বব্যাপী যখন ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত মতামত চলছে, তখন পোপ ফ্রান্সিসের মতো একজন ধর্মীয় নেতার পক্ষ থেকে এমন অবস্থান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এটি কেবলমাত্র খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য নয়, বরং গোটা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের জন্য এক ধরনের নৈতিক সাহসের বার্তা।

তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ

Leave a Reply