ভারতে পাল্টা হামলার ঘোষণা পাকিস্তানের

পাক-ভারত উত্তেজনার নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে দুই দেশের সামরিক সংঘর্ষ। শনিবার ভোরে পাকিস্তান জানায়, ভারতের তিনটি বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাল্টা জবাব হিসেবে তারা পাল্টা অভিযান চালিয়েছে। ‘অপারেশন বুনইয়ান–উন–মারসুস’ নামের এই অভিযান চালিয়ে পাকিস্তান উত্তর ভারতের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর দাবি, ভারতের পাঞ্জাবের বিয়াস অঞ্চলে অবস্থিত ‌‘ব্রাহ্মোস মিসাইলের সংরক্ষণাগার’ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ব্রাহ্মোস হচ্ছে ভারত ও রাশিয়ার যৌথ উন্নয়নকৃত সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল, যার ব্যবহার ভারতীয় সেনাবাহিনীর কৌশলগত অস্ত্রভাণ্ডারে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।

পাকিস্তানের ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “ভারত আমাদের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাই আমরা দেশের আত্মরক্ষার অধিকার অনুযায়ী জবাব দিতে বাধ্য হয়েছি।” দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীরের উধমপুর বিমানঘাঁটি এবং পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতেও হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে।

পাকিস্তান তাদের এই প্রতিরক্ষা অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন বুনইয়ান–উন–মারসুস’। এটি একটি আরবি শব্দগুচ্ছ, যার অর্থ ‘সুদৃঢ় প্রাচীর’। এ অভিযানের লক্ষ্য ছিল ভারতের সেইসব সামরিক ঘাঁটি যেগুলো থেকে পাকিস্তানের ভূখণ্ড ও নাগরিকদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে।

এর আগে শনিবার সকালে পাকিস্তান অভিযোগ করে, ভারত তিনটি বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে একটি রাজধানী ইসলামাবাদের নিকটে অবস্থিত নুর খান ঘাঁটি। বাকি দুটি হল মুরীদ এবং শোরকোট বিমানঘাঁটি, যা পাঞ্জাব অঞ্চলে অবস্থিত এবং ভারতের সীমান্তের কাছাকাছি। পাকিস্তান জানায়, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে বেশিরভাগ মিসাইল সফলভাবে প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে।

পাকিস্তান সরকার এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ এক বিবৃতিতে বলেছে, “ভারতকে এখন আমাদের জবাবের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী মাতৃভূমি, আকাশসীমা এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় সর্বদা প্রস্তুত।”

এদিকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, খুব শিগগিরই সেনাবাহিনী গণমাধ্যমকে ব্রিফ করবে।

উল্লেখ্য, বুধবার থেকে শুরু হওয়া সামরিক উত্তেজনার সূচনা ঘটে ভারতের বিমান হামলার মাধ্যমে। ভারত দাবি করে, তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে কথিত জঙ্গি ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে প্রতিদিন সংঘর্ষ ঘটছে এবং পাল্টা হামলার পর পাল্টা প্রতিক্রিয়া চলছেই।

দুই দেশের বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, এ পর্যন্ত সংঘর্ষে কমপক্ষে ৪৮ জন নিহত হয়েছেন। তবে স্বাধীনভাবে এই তথ্য যাচাই করা যায়নি। রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতের শ্রীনগর ও জম্মু অঞ্চলে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো হয়েছে।

দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যকার এই সামরিক উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে এক অনিশ্চিত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরিস্থিতির দিকে গভীর নজর রাখছে। ভবিষ্যতে কি ঘটবে, তা এখন সময়ই বলে দেবে।

তথ্যসূত্রঃ দৈনিক জনকণ্ঠ

Leave a Reply