আজ শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল মহাসমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের চার দাবি আদায়ে দুটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনটির মহাসচিব সাজিদুর রহমান সমাবেশ শেষে আগামী ২৩ মে বাদ জুমা দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং আগামী তিন মাসের মধ্যে নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভাগীয় সম্মেলনের ঘোষণা দেন।
সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর সোয়া ১টায় শেষ হওয়া এ মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতের আমির মাওলানা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ্ বাবুনগরী। দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-ওলামারা এতে বক্তব্য দেন। মূলত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবি তুলে ধরেই এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
হেফাজতের নেতাদের মতে, সংগঠনটির মূল দাবি চারটি। প্রধান দাবি হলো, হেফাজতের নেতাদের নামে থাকা প্রায় ৩০০টি মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। পাশাপাশি, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে, ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর ঘিরে, এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচারও সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দাবি।
হেফাজতের অন্যতম দাবি হলো নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও তাদের প্রতিবেদনের বাতিল। তারা দাবি করেছেন, এ প্রতিবেদন কোরআনবিরোধী এবং পশ্চিমা মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। তাদের মতে, আলেম-ওলামাদের পরামর্শে নারী সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে।
দ্বিতীয় দফা দাবিতে সংবিধানের মূলনীতিতে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপনের আহ্বান জানায় হেফাজত। তারা বলে, সরকারকে বহুত্ববাদী ও বিভ্রান্তিকর ধারণা থেকে সরে আসতে হবে এবং সমাজে সমকামী ও ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি বন্ধ করতে হবে।
হেফাজতের তৃতীয় ও চতুর্থ দাবিতে রয়েছে শাপলা চত্বর ও জুলাই গণহত্যার বিচার ত্বরান্বিত করতে ট্রাইব্যুনালের সক্ষমতা বৃদ্ধির দাবি। পাশাপাশি, আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী দল হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও বিচার নিশ্চিত করার দাবিও জানানো হয়।
মোট ১২ দফা দাবি তুলে ধরেছে হেফাজতে ইসলাম
মহাসমাবেশে হেফাজত মোট ১২ দফা দাবি প্রকাশ করে, যার মধ্যে রয়েছে:
১. নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল করে নতুন কমিশন গঠন।
২. সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস পুনঃস্থাপন এবং এলজিবিটি ও ট্রান্সজেন্ডারবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান।
৩. শাপলা চত্বর ও অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের বিচার।
৪. আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও বিচার।
৫. আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন।
৬. চট্টগ্রামে সাইফুল ইসলাম হত্যার মূল উসকানিদাতার জামিন বাতিল ও বিচার।
৭. আলেম-ওলামা ও ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে সকল মামলা প্রত্যাহার ও বিচার নিশ্চিত।
৮. ইসরায়েল ও ভারতীয় পণ্য বর্জন এবং মুসলিম নিপীড়নের বিরুদ্ধে উচ্চ কণ্ঠ।
৯. ইসলামী শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা।
১০. রাখাইন করিডর বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার।
১১. পার্বত্য চট্টগ্রামে মিশনারি কার্যক্রম বন্ধ ও দাওয়াতি কার্যক্রমে সুযোগ দেওয়া।
১২. কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, ২৩ মে বাদ জুমা দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। পাশাপাশি আগামী তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
তথ্যসূত্র: দৈনিক সমকাল