বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাফল্যের পেছনে শুধুমাত্র ভাগ্য বা প্রতিভা নয়, বরং রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাস ও জীবনচর্চা যা তারা নিয়মিত অনুসরণ করেন। বিল গেটস, ইলন মাস্ক, ওয়ারেন বাফেট, ওপরা উইনফ্রের মতো কিংবদন্তিরা তাদের প্রতিদিনের কাজে এমন কিছু অভ্যাস তৈরি করেছেন, যা তাদের আলাদা করেছে সাধারণ মানুষের থেকে। আসুন, একনজরে দেখে নিই এই ব্যক্তিদের সাফল্যের পেছনে থাকা ১০টি শক্তিশালী অভ্যাস।
১. ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠা
প্রায় সব সফল ব্যক্তি দিনের শুরুটা খুব ভোরে করেন। উদাহরণস্বরূপ, টিম কুক (CEO, Apple) সকাল ৪:৩০ টায় ঘুম থেকে ওঠেন। সকালে সময় কাটানো মানেই পরিকল্পনা, ব্যায়াম ও আত্মউন্নয়নের সুযোগ, যা তাদের দিনের সফলতা নিশ্চিত করে।
২. নিয়মিত বই পড়া
ওয়ারেন বাফেট প্রতিদিন ৫০০ পৃষ্ঠা পড়েন এবং বিল গেটস বছরে গড়ে ৫০টি বই পড়েন। বই পড়া তাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়ায় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। তাদের মতে, বই পড়া একটি অবিচ্ছেদ্য অভ্যাস যা তাদের মেধা ও বিচক্ষণতা বাড়ায়।
৩. লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা লিখে রাখা
সফল ব্যক্তিরা তাদের লক্ষ্য কেবল কল্পনায় রাখেন না, বরং তারা লিখে রাখেন এবং প্রতিনিয়ত মূল্যায়ন করেন। এটি তাদের ফোকাস এবং অগ্রগতি নিশ্চিত করে। এমনভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ তাদের দৈনন্দিন কাজের প্রতি মনোযোগী হতে সহায়তা করে।
৪. শারীরিক ব্যায়াম
শরীর সুস্থ না থাকলে মনও সক্রিয় থাকে না—এই উপলব্ধি থেকেই নিয়মিত ব্যায়াম করেন মার্ক জাকারবার্গ থেকে শুরু করে রিচার্ড ব্র্যানসন পর্যন্ত। তারা জানেন, শারীরিক সুস্থতা তাদের মানসিক শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
৫. সময় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা
ইলন মাস্ক তার দিনকে ৫ মিনিটের স্লটে ভাগ করে কাজ করেন। প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগাতে জানেন বলেই তিনি একাধিক কোম্পানি পরিচালনা করতে সক্ষম হন। সময় ব্যবস্থাপনা দক্ষতার মাধ্যমে তাদের কাজের গতি এবং ফলাফল বাড়ানো সম্ভব হয়।
৬. ধ্যান ও মানসিক প্রশান্তি
অপরা উইনফ্রে ও অ্যারিয়ানা হাফিংটনের মতো ব্যক্তিত্বরা প্রতিদিন কিছু সময় ধ্যান করেন, যা মনোসংযোগ এবং মানসিক স্বাস্থ্যে সাহায্য করে। এটি তাদের মানসিক চাপ কমাতে এবং আরও সৃজনশীলভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।
৭. ব্যর্থতা থেকে শেখা
তারা ব্যর্থতাকে ভয় পান না, বরং ব্যর্থতাকে শেখার একটি ধাপ হিসেবে দেখেন। উদাহরণস্বরূপ, ইলন মাস্ক স্পেসএক্স-এর একের পর এক ব্যর্থ লঞ্চের পরেও হাল ছাড়েননি। তাদের মতে, ব্যর্থতা থেকেই সাফল্যের পথে এগোনোর মূল উপায় থাকে।
৮. নিজেকে সবসময় শেখার মাঝে রাখা
সফল ব্যক্তিরা মনে করেন শেখার কোনও শেষ নেই। তারা নতুন দক্ষতা অর্জনে আগ্রহী এবং প্রযুক্তি বা প্রবণতার সাথে তাল মেলান। এই অভ্যাস তাদের উদ্ভাবনমূলক চিন্তা ও কাজের দক্ষতা বাড়ায়।
৯. টিমওয়ার্ক ও নেতৃত্বের সমন্বয়
তারা কেবল ভালো লিডারই নন, বরং একজন ভালো টিমমেম্বারও। তারা সবাইকে মূল্যায়ন করতে জানেন এবং দল গঠনে সময় দেন। ভালো নেতৃত্ব ও টিমওয়ার্ক তাদের সাফল্যের মূল কৌশল।
১০. সৃজনশীল চিন্তা ও ঝুঁকি নেওয়ার সাহস
‘আউট অব দ্য বক্স’ চিন্তা এবং সাহসিক সিদ্ধান্তই অনেক সময় তাদের এগিয়ে দেয়। বিল গেটস মাইক্রোসফট ছাড়াও জনহিতকর কাজে সাহসিক বিনিয়োগ করেছেন। সৃজনশীল চিন্তা ও ঝুঁকি নেওয়া তাদেরকে নতুন নতুন সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়।
সফলতা অর্জনের পথে
সফলতা হঠাৎ করে আসে না। এটি ধৈর্য, কঠোর পরিশ্রম, এবং প্রতিদিনের অভ্যাসের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এসব অভ্যাস আপনার জীবনেও প্রয়োগ করে আপনি নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন। যদি আপনি সফল হতে চান, তাহলে আজ থেকেই এই অভ্যাসগুলো নিজ জীবনে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করুন।
তথ্য সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ