বাংলাদেশ থেকে নারীদের বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। তবে সেই সঙ্গে বাড়ছে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জও। অনেক নারী নানা কারণে বিদেশে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে নারী অভিবাসীদের সুরক্ষা ও কল্যাণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।
বুধবার ঢাকার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালা ‘নারী অভিবাসীদের অধিকার ও ক্ষমতায়নে আমরা সবাই এক’। সেখানে বক্তারা নারীদের বিদেশগমনের আগে দক্ষতা অর্জন, বিদেশে সুরক্ষা এবং দেশে ফিরে সহায়তা পাওয়ার বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে তুলে ধরেন।
বেসরকারি সংস্থা ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’-এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, “নারীদের দক্ষ করে বিদেশে না পাঠানোয় তাদের বিদেশে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে হয়। দেশে ফিরে এসেও তারা সমাজে হেয় হন। তাই নারী অভিবাসনকে নিরাপদ করতে ও দেশে ফিরে তাদের সহায়তা দিতে একটি শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি।”
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান। তিনি জানান, “বাংলাদেশের প্রায় ১০ লাখ নারী বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। তবে গত ছয় বছরে ৬৭ হাজারের বেশি নারী বিভিন্ন সংকটে পড়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। এদের অনেকেই নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।”
কর্মশালার প্রধান অতিথি এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, “নারীরা বিদেশ থেকে ফিরে এলে তাদের মর্যাদার সঙ্গে পুনঃনিয়োগ বা কাজে যুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে তারা সমাজে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারবেন।”
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল হক চৌধুরী জানান, বিদেশফেরত নারীদের সেবার মান উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। তিনি বলেন, “বিমানবন্দর থেকে শুরু করে সার্বিক সেবার মান বাড়াতে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছি।”
এছাড়া প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের রেইজ প্রকল্পের পরিচালক ড. এ টি এম মাহবুব-উল-করিম জানান, “এখন পর্যন্ত প্রায় ৩১ হাজার বিদেশফেরত নারীকে সেবা প্রদান করা হয়েছে এবং এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”
এই কর্মশালা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্র্যাকের যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত ‘ইমপ্রুভড সাসটেইনেবল রিইন্টিগ্রেশন অব বাংলাদেশি রিটার্নি মাইগ্রেন্টস (প্রত্যাশা-২)’ প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং ব্র্যাকের ‘নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশি উইমেন মাইগ্রেন্টস’-এর চেয়ারপারসন শীপা হাফিজা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী, সেন্টার ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন স্টাডিজের সভাপতি অধ্যাপক ইশরাত শামীম, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব উইমেন এন্টারপ্রেনার্সের সভাপতি ড. রুবিনা হোসেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার রাহনুমা সালাম খান এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর প্রোগ্রাম অ্যাসিস্ট্যান্ট আমরিন জামান আনিশা।
নারীদের বিদেশগমনে আগ্রহ বাড়লেও নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে হলে বহুমুখী ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। কর্মশালায় আলোচ্য বিষয়গুলো থেকে স্পষ্ট যে, অভিবাসনের শুরু থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে নারীদের সহায়তায় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার আরও সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র: দৈনিক সমকাল