অফিসে কাজ করতে করতেই হঠাৎ ঘাড় বা পিঠে ব্যথা অনুভব করেছেন কি? কিংবা ঘুম ভাঙার পর বুঝতে পারছেন, ঘাড়ে টান লেগেছে অথচ মনে করতে পারছেন না কীভাবে? এসব উপসর্গের পিছনে মানসিক চাপ বা টেনশন একটি বড় কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঘাড়ে ব্যথা এবং মানসিক চাপের যোগসূত্র
মানসিক চাপ আমাদের শরীরে নানা পরিবর্তন ঘটায়। বিশেষ করে ঘাড় ও কাঁধের পেশিতে এর প্রভাব পড়া খুবই সাধারণ। এই ব্যথার পেছনে রয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
১. পেশির অনৈচ্ছিক সংকোচন বা মাসল টেনশন
যখন আমরা মানসিক চাপের মধ্যে থাকি, তখন কর্টিসল হরমোন নিঃসৃত হয় এবং শরীরকে “ফাইট অর ফ্লাইট” মোডে নিয়ে যায়। এটি আমাদের পেশিগুলোকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি শক্ত করে ফেলে। ফলে দীর্ঘ সময় পেশি শক্ত হয়ে থাকার কারণে ঘাড় ও পিঠে ব্যথা দেখা দেয়। অনেক সময় আমরা না বুঝেই ঘাড় ও কাঁধ শক্ত করে রাখি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
২. ভুলভাবে বসা বা খারাপ পশ্চার
দীর্ঘক্ষণ ডেস্কে বসে কাজ করার সময় আমরা প্রায়ই খেয়াল না করেই কুঁজো হয়ে বা মাথা নিচু করে কাজ করি। স্ট্রেসের সময় এই ভঙ্গি আরও খারাপ হয়। এর ফলে পেশিগুলোর নমনীয়তা কমে যায় এবং ব্যথা শুরু হয়।
৩. মানসিক চাপজনিত মাথাব্যথা
অনেক সময় আমরা যাকে মাইগ্রেন ভেবে ব্যথার ওষুধ খাই, সেটি আসলে টেনশন হেডেক হতে পারে। এই ধরনের মাথাব্যথা ঘাড় থেকে মাথা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে এবং আলো বা শব্দে অস্বস্তি তৈরি করে।
৪. দাঁতে দাঁত চেপে রাখা
স্ট্রেসের কারণে অনেকে ঘুমের মধ্যে দাঁত পিষে বা চোয়াল শক্ত করে রাখেন। এই অভ্যাসও ঘাড়ের পেশিতে টান ও ব্যথার কারণ হতে পারে।
মানসিক চাপ থেকে সৃষ্ট ঘাড়ব্যথা কমানোর উপায়
এই ধরনের ব্যথা কমাতে কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে যেগুলো নিয়মিত চর্চা করলে আরাম পাওয়া সম্ভব।
১. গরম সেঁক
পেশির শক্তভাব কমাতে গরম পানির ব্যাগ বা হিটিং প্যাড ব্যবহার করুন। এটি রক্ত চলাচল বাড়িয়ে ব্যথা হ্রাস করে।
২. সহজ স্ট্রেচিং
মাথা সোজা রেখে থুতনি সামান্য নিচে ভাজ করে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। ধীরে ধীরে কাঁধ ঘুরিয়ে স্ট্রেচ করুন। দিনে কয়েকবার এই ব্যায়াম করলে উপকার পাওয়া যাবে।
৩. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট
দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ থাকতে হলে স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এর জন্য মেডিটেশন, শরীরচর্চা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৪. শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
প্রতিদিন ১০ মিনিট শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে মানসিক চাপ কমে এবং শরীর ও মন উভয়ই স্বস্তি পায়।
৫. প্রোগ্রেসিভ মাসল রিলাক্সেশন
এই থেরাপিউটিক কৌশলে শরীরের বিভিন্ন পেশি গ্রুপকে পর্যায়ক্রমে শিথিল করা হয়। এটি মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং পেশির ব্যথা কমাতে কার্যকর।
৬. লাইফস্টাইল পরিবর্তন
কম্পিউটারের মনিটর চোখের সমান উচ্চতায় রাখুন, আরামের জন্য চেয়ারে লাম্বার সাপোর্ট ব্যবহার করুন। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান এবং নরম বালিশ ব্যবহার করুন।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?
প্রাথমিকভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। তবে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি:
- ব্যথা তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে।
- হাত বা পায়ের ঝিনঝিনি বা দুর্বলতা দেখা দিলে।
- মাথাব্যথার সঙ্গে বমি বা দৃষ্টির সমস্যা হলে।
স্ট্রেস শুধু মনের ক্ষতি করে না, শরীরেও তার প্রতিফলন পড়ে। ঘাড় ও পিঠের ব্যথার পেছনে মানসিক চাপের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। তাই শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষাও জরুরি। নিজের প্রতি যত্ন নিন, কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিন এবং চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ